নেপাল ঘুরতে গেলে যে ১০টি জিনিস আপনার জানা অবশ্যই প্রয়োজন

নেপাল, বিশ্বের অন্যতম সুন্দর দেশ যেখানে হিমালয়ের অপার সৌন্দর্য, প্রাচীন মন্দির, এবং সংস্কৃতির মেলবন্ধন পর্যটকদের মুগ্ধ করে। তবে সেখানে যাওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা থাকলে আপনার ভ্রমণ হবে আরও স্মরণীয় ও উপভোগ্য।
১. ভিসা ও প্রবেশের নিয়ম
বাংলাদেশ থেকে নেপালে ভ্রমণের জন্য আগেই ভিসা প্রসেস করার দরকার নেই। কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর ‘অন-অ্যারাইভাল ভিসা’ পাওয়া যায়। ভিসার জন্য প্রয়োজন পাসপোর্ট, ছবি, এবং নির্দিষ্ট ফি প্রদান। ১৫, ৩০, এবং ৯০ দিনের জন্য আলাদা ভিসার অপশন রয়েছে।
২. নেপালের আবহাওয়া ও ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
নেপালের আবহাওয়া ঋতুভেদে পরিবর্তিত হয়। মার্চ থেকে মে (বসন্ত) এবং সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর (শরৎ) হলো নেপাল ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে ভালো সময়। এই সময়গুলোতে আবহাওয়া পরিষ্কার থাকে এবং পাহাড়ের দৃশ্য দেখার জন্য আদর্শ। শীতকালে (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি) বরফ পড়তে পারে, যা হিমালয় প্রেমীদের জন্য চমৎকার সুযোগ হলেও শীত সহ্য করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
৩. মানি এক্সচেঞ্জ করবো কোথায়?
নেপালে মুদ্রার একক হলো নেপালি রুপি (NPR)। বাংলাদেশি টাকা বা ডলার সহজেই কাঠমান্ডু এবং পোখারার মানি এক্সচেঞ্জ বা ব্যাংকে বদলানো যায়।
অনেকেই আমরা মনে করি বাংলাদেশ থেকে মানি এক্সচেঞ্জ করে নেপালি রুপি নিয়ে নিবো, কিন্তু সেটা ভুল। সিজন অনুযায়ী আমাদের দেশের মানি এক্সচেঞ্জগুলো রুপির দাম বাড়িয়ে দেয়। যেখানে নেপালি রুপির দাম বাংলাদেশি টাকার চেয়ে কম, সেখানে মানি এক্সচেঞ্জে গেলে বাংলাদেশি ১০৮-১১০ টাকায় ১০০ রুপি অফার করে। উল্টো বাংলাদেশ থেকে ডলার নিয়ে গেলে পোখারা/কাঠমুন্ডুতে ভালো এক্সচেঞ্জ রেট পাওয়া যায়।
আর নিজের ক্রেডিট কার্ড বা, ডুয়েল কারেন্সি ডেবিট কার্ড এন্ডোর্স করে যেতে পারেন। কারণ, অনেক সময়ই অনেক জায়গায় আন্তর্জাতিক ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড চলে, সেখানে এক্সচেঞ্জ রেট বেটার পাবেন। ভ্যালু ফর মানি ডিল। তবে স্থানীয় বাজার বা, ছোট দোকানগুলোর জন্য নগদ রুপি রাখা জরুরি। এবং শহরের বাইরে অনেক টুরিস্ট স্পটেই মানি এক্সচেঞ্জ পাবেন না।
৪. যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থা
নেপালের ভেতরে যাতায়াতের জন্য আছে ট্যাক্সি, বাস, এবং রেন্ট-এ-কার ব্যবস্থার মাধ্যমে যাতায়াত করা যায়। শহরের মধ্যে অটোরিকশা ও মোটরবাইক ভাড়াও পাওয়া যায়। কাঠমান্ডু থেকে পোখারা, লুম্বিনি বা অন্য শহরে যাওয়ার জন্য অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট ও পর্যটক বাসের সুবিধা আছে। তবে, রাস্তার অবস্থা খুব ভালো নয়, তাই কিছুটা সময় নিয়েই ট্রাভেল করতে হয়।
নেপালের রাস্তায় কাঠমান্ডু থেকে পোখারা ইত্যাদি লং ডিস্টেন্স রুটে ওদের সোফা-বাস বেশ জনপ্রিয়। ফ্লাইটের খরচ কমাতে এটি বেশ কাজে দেয়। আর যদি বড় গ্রুপ নিয়ে সফর করেন, তাহলে নিজস্ব রেন্ট-এ-কার গাড়ি ভালো হবে। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে যাওয়া বা, প্রকৃতি উপভোগ করতে পারবেন নিজের মত করে।


৫. হোটেল ও থাকার ব্যবস্থা
নেপালে সব ধরণের বাজেটের জন্য হোটেল, রিসোর্ট এবং গেস্টহাউস রয়েছে। কাঠমান্ডুর থামেল, পোখারার লেকসাইড, এবং নাগরকোট পর্যটকদের থাকার জন্য জনপ্রিয় এলাকা। আগে থেকে হোটেল বুক করে নিলে সুবিধা হয়, বিশেষত পর্যটনের মৌসুমে। নেপালের জনপ্রিয় সব হোটেলগুলোর বুকিং এর অপশন পেয়ে যাবেন আমাদের হোটেল বুকিং সেগমেন্টে।
৬. খাবার ও পানীয়
নেপালি খাবারের মধ্যে ‘দাল ভাত’ সবচেয়ে জনপ্রিয়, যা লেন্সের স্যুপ, ভাত, সবজি এবং মাংস দিয়ে তৈরি। এছাড়া, ‘মোমো’ (নেপালি ডাম্পলিংস), ‘নিউয়ারি খাবার’ এবং ‘থুকপা’ (তিব্বতি নুডল স্যুপ) অত্যন্ত জনপ্রিয়। নেপালে খাওয়ার আগে পানির মান দেখে নেওয়া উচিত, বিশুদ্ধ বোতলজাত পানি পান করাই ভালো।
আর নেপাল যেহেতু হিন্দু প্রধাণ দেশ, তাই সেখানে সব হোটেলে হালাল খাবার পাবেন না। আপনি মুসলিম হয়ে থাকলে মাংস জাতীয় খাবার খাওয়ার আগে শিওর হয়ে নেবেন, খাবারটি হালাল কি না। হালাল খাবার না পেলে মাংস অ্যাভয়েড করতে পারেন। ভেজিটেরিয়ান খাবার হতে পারে সেক্ষেত্রে আপনার গেটওয়ে।
কিছু জনপ্রিয় খাবার, যা না খেলে মিস করবেন, জানতে চাইলে ক্লিক করুন এখানে!
৭. ভাষা ও যোগাযোগ
নেপালের প্রধান ভাষা নেপালি, তবে ইংরেজি প্রচলিত এবং পর্যটন এলাকায় বেশিরভাগ মানুষ ইংরেজিতে কথা বলতে পারে। স্থানীয়দের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়তে কয়েকটি সাধারণ নেপালি শব্দ জেনে নেওয়া উপকারী হতে পারে। যেমন:
- “ধনিয়াবাদ” (ধন্যবাদ)
- “নমস্তে” (হ্যালো/বিদায়)
৮. স্থানীয় সংস্কৃতি ও আচরণবিধি
নেপালে ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মন্দির বা ধর্মীয় স্থানে প্রবেশের সময় জুতা খুলতে হয় এবং সংক্ষিপ্ত পোশাক পরা এড়িয়ে চলা উচিত। স্থানীয়দের ছবি তোলার আগে অনুমতি নেওয়া শোভনীয়।
৯. অ্যাডভেঞ্চার ও দর্শনীয় স্থান
নেপালে ট্রেকিং, হাইকিং, রাফটিং, প্যারাগ্লাইডিং এবং বাঞ্জি জাম্পিং করার সুবর্ণ সুযোগ আছে। কিছু বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান হলো:
এভারেস্ট বেস ক্যাম্প (বিশ্ববিখ্যাত ট্রেকিং রুট)
পোখারা (শান্ত সরোবর ও পাহাড়ি সৌন্দর্য)
লুম্বিনি (গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান)
চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্ক (বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য)
১০. নিরাপত্তা ও জরুরি ব্যবস্থা
নেপালে সাধারণত নিরাপদ, তবে নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কিছু সতর্কতা নেওয়া উচিত। ফোন রোমিং করে নিয়ে যেতে পারেন অথবা, স্থানীয় সিম কার্ড নিয়ে নিলে সহজে যোগাযোগ করা যাবে। বাংলাদেশের রবি'র মত আজিয়াটার নেপালি টেলিকম কনসার্ণ এনসেল নিয়ে নিতে পারেন। এর নেটওয়ার্ক বেশ ভালো পাবেন। এবং জরুরি নম্বরগুলো (পুলিশ, হাসপাতাল, দূতাবাস) নোট করে রাখা উচিত।
Praesent Iaculis sit Vehicula
Lap. 4 Tellus A17-B27
নেপাল প্রকৃতি, সংস্কৃতি, এবং অ্যাডভেঞ্চারের এক অপূর্ব মিশ্রণ। সঠিক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিয়ে গেলে আপনার নেপাল ভ্রমণ হবে আরও আনন্দদায়ক ও ঝামেলামুক্ত। তাই ভ্রমণের আগে এই বিষয়গুলো জেনে নিলে আপনার অভিজ্ঞতা হবে স্মরণীয়! আর সামনেই আপনার নেপালে যাওয়ার প্ল্যান থাকলে এখনই নক করতে পারেন ট্রিপইজি কেয়ার ডেস্ক অথবা, আমাদের ফেসবুক পেজে, আর ট্রিপ বুক করার সব রকমের তথ্য ও সহযোগিতা পেয়ে যেতে পারেন।